চ্যাম্পিয়ন ট্রফির আয়োজনে নাটকীয়তাও কম ছিল না। একদিন আগে পাকিস্তান আইসিসিকে হাইব্রিড মডেলের বিকল্প বিবেচনা করতে বলেছিল। যে পাকিস্তান হাইব্রিড মডেল ব্যবহার করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে রাজি, সুর নরম!
না, কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি নেই। তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) এই অবস্থানের কথা পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
PCB একটি হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের জন্য দুটি শর্ত অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে জানা গেছে: (1) ICC রাজস্ব থেকে PCB-এর বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং (2) সমস্ত বিশ্বব্যাপী টুর্নামেন্ট যা ভারতকে আয়োজক করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। 2031 সালের মধ্যে একটি হাইব্রিড মডেলে স্যুইচ করুন।
পাকিস্তান অবজারভারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত তাদের ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলবে। তবে টুর্নামেন্টের বেশির ভাগ ম্যাচই হবে পাকিস্তানে। ফাইনালের ভেন্যু হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম। তবে ভারত ফাইনালে উঠলে লাহোরে নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলা হবে।
আইসিসির বর্তমান আর্থিক মডেল অনুযায়ী, রাজস্ব আয় থেকে সবচেয়ে বেশি ৩৮.৫০% পেয়ে থাকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই), যা বছরে ২৭৫০ কোটি টাকারও বেশি। পিসিবি পায় মাত্র ৫.৭৫%, যা বছরে ৪২৩ কোটি ৪০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু হাইব্রিড মডেলের জন্য পাকিস্তানের শর্ত মানা হলে আইসিসি থেকে দেশটির জন্য রাজস্ব বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
এ ছাড়া আগামী ৭ বছরে ভারতে যতগুলো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা, পিসিবির শর্ত অনুযায়ী বিসিসিআইকে সেসব টুর্নামেন্ট হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করতে হবে। অর্থাৎ, ভারত সরকার পাকিস্তানে রোহিত-কোহলি-বুমরাদের না পাঠানোয় পাকিস্তান সরকারও বাবর-রিজওয়ান-আফ্রিদিদের ভারতে পাঠাবে না।
২০২৫ থেকে ২০৩১-এই ৭ বছরে ভারতে আইসিসির ৪টি বড় ইভেন্ট হওয়ার কথা। ২০২৫ মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৯ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০৩১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এই চার টুর্নামেন্ট খেলতে পাকিস্তান দল ভারতে যাবে না।
দুবাইয়ে অবস্থানরত পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি গতকাল অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের ৪৩ রানে জেতা ম্যাচটি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নাকভি বলেন, ‘দেখুন, (ভেতরে ভেতরে) অনেক কিছুই চলছে। কিন্তু আমি এই মুহূর্তে বেশি কথা বলতে চাই না। কারণ, এতে সবকিছু পণ্ড হয়ে যেতে পারে। আমরা আমাদের দিকটা আইসিসিকে জানিয়েছি, ভারত ওদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।’
হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনে পাকিস্তান রাজি কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে নাকভি বলেন, ‘এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে, যেন দুই দেশই জেতে। আমরাও জিতি, ভারতও জেতে। আমরা শুধু দেখব কোনো কিছু যেন একতরফাভাবে না হয়। ক্রিকেটের ভালোর জন্য যেটা করতে হয়, সেটাই করব। এমন যেন না হয় যে ভারত আমাদের দেশে কখনোই খেলতে আসবে না আর আমরা বারবার ভারতে যাব।’
ভবিষ্যতে এক দেশ আরেক দেশে খেলতে না যাওয়ার ব্যাপারটিকে হাইব্রিড মডেল মনে করেন না নাকভি, ‘এটা কোনোভাবেই হাইব্রিড ফর্মুলা হবে না, নতুন কোনো ফর্মুলা হতে পারে। সেক্ষেত্রেও আমরা দেখব সবকিছু যেন সমান-সমান থাকে। পাকিস্তানের সম্মান আমাদের কাছে আগে। দিন শেষে আমাদের চাওয়া ক্রিকেটের জয় হোক।’
রাজনৈতিক বৈরিতায় ২০০৮ সালের পর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত ক্রিকেট দল। ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো ২০২৩ এশিয়া কাপেরও একক আয়োজক ছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারত সরকার পাকিস্তানে দল না পাঠানোয় পিসিবিকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে এশিয়া কাপ আয়োজন করতে হয়, যা ক্রিকেট বিশ্বে হাইব্রিড মডেল নামে পরিচিতি পায়।
আগামী বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হওয়ার কথা। ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া টুর্নামেন্টের অন্য ছয় দল বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড।