প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নে নতুন যে তথ্য জানা গেল।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পে-কমিশন।
সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত পে-কমিশন ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পে-কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান।
বৈঠকে শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা সমাধান, শতভাগ পদোন্নতি, চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি, এবং পুরনো টাইমস্কেল পুনর্বহালসহ একাধিক দাবি তুলে ধরেন।
কমিশন চেয়ারম্যান জানান, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তাদের হাতে আছে, তবে এর বাস্তবায়নের সুযোগ সীমিত। কারণ, এই সিদ্ধান্ত মূলত সরকারি সার্ভিস কমিশনের আওতাধীন। তবে প্রস্তাবটি নোট আকারে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
শিক্ষক নেতারা বৈঠকে আরও বলেন, একটি ছয় সদস্যের পরিবারের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় বিবেচনায় বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তারা বর্তমান ২০ গ্রেড কমিয়ে ১২ গ্রেড করার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে সর্বনিম্ন বেসিক ৩৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা করার দাবি জানান।
এছাড়া তারা চিকিৎসা ভাতা ১০ হাজার, শিক্ষা ভাতা এক সন্তানের জন্য ৫ হাজার ও দুই সন্তানের জন্য ১০ হাজার টাকা, এবং বাড়িভাড়া ভাতা এলাকাভেদে ৬৫–৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানান। পাশাপাশি বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ এবং সকল স্তরের কর্মচারীর জন্য ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা যাতায়াত ভাতা চালুর প্রস্তাব করেন।
টিফিন ভাতার প্রসঙ্গে শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে তারা মাত্র ৬ টাকা ৬৬ পয়সা পান, যা দিয়ে এক কাপ চা পর্যন্ত কেনা যায় না। এ তথ্য শুনে কমিশনের সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
অন্য দাবির মধ্যে ছিল— শতভাগ পেনশন ও আনুতোষিক অর্থ, প্রতি দুই বছর অন্তর শ্রান্তি ভাতা, নববর্ষে ৫০ শতাংশ বোনাস এবং শিক্ষকদের জন্য রেশন সুবিধা চালু করা।
চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, “শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার মান বাড়ানো সম্ভব নয়। তাদের উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবসম্মত এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।”
বৈঠক শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, তারা শিক্ষকদের বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। বাজারদর ও মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে ছয় সদস্যের পরিবারের উপযোগী বেতন কাঠামোর দাবি জানানো হয়েছে।
তবে ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নে কমিশনের সীমিত সম্ভাবনার মন্তব্যে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন এবং বলেন— “প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের পথেই যেতে হবে।”