এবার বিনা খরচে পড়াশোনা করতে গিয়ে যেভাবে ক্রিকেটার হয়ে উঠলেন বার্গার!‘মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক’, কথাটি নান্দ্রে বার্গারের জীবনের সঙ্গে মিলে যায় পুরোপুরি। লেখাপড়া করে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে জীবন গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। আর এর জন্য ঢাল বানিয়েছিলেন ক্রিকেটকে। কারণ? ক্রিকেট খেলার মাধ্যমেই যে বিনা খরচে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেই ক্রিকেটই এখন হয়ে উঠেছে তার ধ্যান-জ্ঞান, জীবনের পাথেয়। শৈশবে অবশ্য কেবল ক্রিকেট নয়, আরও অনেক খেলাই খেলেছেন বার্গার।
১৫ বছর বয়সে যেমন বয়সভিত্তিক আঞ্চলিক টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন তিনি। ১৭ বছর বয়সে খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোয়াশ ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে। তবে পিঠের চোট তাকে মনোযোগী করে তোলে ক্রিকেটে। অবশ্য কখনোই পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার। ক্রিকেটে সামর্থ্যের ছাপ রেখেই ২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব দা ভিতভাতেরসর্যান্ডে (ডব্লিউআইটিএস) বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে যান বার্গার।
সেটি আর হা’তছাড়া করেননি ওই স’ময়ের ১৮ বছর বয়সী পে’সার। ভর্তি হয়ে যান ম’নোবিজ্ঞানে। এক দ’শক আগে নেওয়া সেই সি’দ্ধান্তে পুরোই পা’ল্টে গেছে তার জী’বন। এখন বা’র্গারের বয়স ২৮ বছর। এরই ম’ধ্যে দক্ষিণ আ’ফ্রিকার হয়ে তিন সংস্করণে খেলে ফেলেছেন তিনি; দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি। দলটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের একজনও হয়ে উঠছেন বাঁহাতি এই পেসার। দিন দুয়েক আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, বর্তমানে সব ক্রিকেটারের জন্য কাঙ্ক্ষিত টুর্নামেন্ট আইপিএলেও সুযোগ পেয়ে গেছেন বার্গার। খেলছেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে পেছনে ফিরে তাকালেন তিনি। শোনালেন তার পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প। দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন বাঁহাতি এই পেসার।“শুনতে অদ্ভুত লাগছে, তাই না। যারা ক্রিকেট খেলে তাদেরকে ফুল ফ্রি স্কলারশিপের সুযোগ করে দেয় উইটস (বিশ্ববিদ্যালয়)।
আমার মনে হলো, এটা দারুণ সুযোগ। আমি আসলে ক্রিকেটার হতে চাইনি, কিন্তু বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছিলাম, তখন মনে হলো কেন না? ক্রিকেটটা মূলত আমার পড়ালেখার ব্যাক-আপ ছিল (হাসি)।” পিঠের চোট থেকে সেরে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটে অংশ নেন বার্গার। তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভবিষ্যৎ পেসার হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন উইটসের কোচ নিল লেভেনসন। তবে নিজের বোলিং নিয়ে তখনও সেভাবে ভাবতেনই না বার্গার। “তার (কোচের) কথায় প্রথমে আমি হেসেছিলাম।
আর বলেছিলাম, ‘আমি বল করি ঘণ্টায় ১২৫ কিমি গতিতে। এটা দিয়ে জীবন চালানো যাবে না। আমি অনেককে ঘণ্টায় ১৪৫ কিমি গতিতে বল করতে দেখেছি।’ এরপর তাকে বললাম, ‘ঠিক আছে, একবার চেষ্টা করে দেখা যাক।‘” “বাড়ির উঠানে বন্ধুদের সঙ্গে, বাবা-মায়ের সঙ্গে সবসময়ই ক্রিকেট খেলতাম। তবে বলব না, পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার ছিল।” আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসে সুযোগ পেয়েছেন বার্গার (ডানে)।
কয়েক স’প্তাহের মধ্যে অনুশীলন করতে করতে একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকে বার্গারের। পে”শাদার ব্যা’টসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করার তা”ড়নাও অ’নুভব করেন। তার সেই চা’ওয়াও দ্রুত পূরণ হয়ে যায়। সু’যোগ পান জো’হানেসবার্গের ফ্র্যা’ঞ্চাইজি দল হাইভেল্ড লায়ন্সের নেটে বোলিংয়ের। সময়ের সঙ্গে ক্রিকেটে বার্গারের ভালোলাগা বাড়তে থাকে আরও। ২০১৬-১৭ মৌসুমের কথা, মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রি পেতে তখন তার আর বাকি ৬ মাসের মতো, সেই সময় জীবনের এক টার্নিং পয়েন্টে এসে দাঁড়ান তিনি, নিতে হয় বড় এক সিদ্ধান্ত।
কেপ কোবরাস থেকে ক্যারিয়ারের প্রথম ফ্র্যা’ঞ্চাইজি চু”ক্তির প্রস্তাব পান, তবে তাতে সাড়া দিতে হলে ‘ছেড়ে দিতে হবে’ প’ড়ালেখা। “আমি লে’খাপড়া স্থ’গিত করে জো’বার্গ ছেড়ে চলে যাই। কারণ, বাইরে থেকে কোর্সটি করার অনুমতি ছিল না। আবার আমার (কেপ কোবরার সঙ্গে) চুক্তির কারণে আমাকে কেপ টাউনে থাকতে হতো। তাই আমি সব কিছু ছেড়ে ক্রিকেটে মনোযোগ দেই।” বার্গারের ওই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তার যথার্থতা মিলতে থাকে অল্প সময়েই। গত বছর পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদও।
ক্রিকেটকে জীবনের লক্ষ্য বানাতে যে প্রদেশ ছেড়েছিলেন, সেই জোহানেসবার্গেই গত ডিসেম্বরে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামেন তিনি, ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে। ওই মাসে হয়ে যায় তার ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেকও। ওই সময়ের কথা উঠতেই বার্গার বললেন, “জীবনের এমন রূপ বদল দারুণ মজার, তাই না?”সূত্র-বিডিনিউজ২৪।