এন্দ্রিকের রোমাঞ্চকর গোলে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারালো ব্রাজিল!টানা চার ম্যাচ জয়হীন, হার টানা তিন। সবশেষ জয় ছিল গত বছর সেপ্টেম্বরে পেরুর বিপক্ষে। সময়টা ভালো যাচ্ছিল না ব্রাজিলের। নতুন বছরে প্রথম ম্যাচ তারা খেলতে নেমেছিল বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, গত ১১ বছরে যাদের সঙ্গে তিনবারের দেখায় জেতেনি কখনও। শনিবার একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট করে ইংলিশদের বিপক্ষে ব্রাজিল টানা তৃতীয় ড্রয়ের পথে এগোচ্ছিল। কিন্তু ১৭ বছর বয়সী এন্ডরিক গড়ে দিলেন পার্থক্য। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারালো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
১৫ বছর পর থ্রি লায়নদের বিপক্ষে জিতলো ব্রাজিল। শনিবার (২৩ মার্চ) ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে এন্দরিকের একমাত্র গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো ১৭ বছর বয়সী এন্দরিক। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙে নিজের দখলে নিয়েছিলেন ভিনিসিউস। ডি-বক্সে তার শট ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে প্রতিহত হলেও ফাঁকায় দাঁড়ানো এন্দরিক বল পেয়ে যান। এরপর সহজেই লক্ষ্যভেদ করেন।
এদিন গোলের ভা’লো সুযোগ পায় ব্রাজিল। নবম মিনিটে দা’রুণ টিম প্লের পর ডি বক্সের বেশ বাইরে থেকে শট নেন র’দ্রিগো। ১২ মিনিটে প্রতি আ’ক্রমণ থেকে বল পেয়ে দারুণ বল বড়িয়েছিলেন পাকেতা। সামনে একা গো’লরক্ষককে পেয়েও দু’র্বল ফ্লিক করেন ভি’নিসিউস। গো:লরক্ষক পিকফোর্ডকে ফাঁ’কি দিলেও গো’ললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেন ওয়াকার। ১৬ মিনিটে ফের সুযোগ মিস করেন ভিনিসিউস। রদ্রিগো দারুণ বল বাড়ালেও শট নেয়ার আগে পড়ে যান তিনি। পরের মিনিটে পাকেটার বাড়ানো দারণ বলে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন রদ্রিগো।
১৮ মিনিটে বেলিঙ্ঘ্যাম দারুণ বল বাড়ান গ্যালাঘারকে। তার পাস ধরে ওয়াটকিন্স ডিবক্সের ভেতর থেকে বল আকাশে মারলে সুযোগ নষ্ট হয় ইংল্যান্ডের। ১৯ মিনিটে মাঠ ছেড়ে যান ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ও’য়াকার। বদলি হি’সেবে নামেন কোনসা। এর কিছুক্ষণ আগেই আ’ঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তখন থেকেই অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। ২১ ও ২২ মিনিটে দুবার ফ্রি’কিক পায় ইংল্যান্ড। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল বিপজ্জনক জায়গায়। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি ইংল্যান্ড। ২৭ মিনিটে ব্রা’জিলের ডি-বক্সে ও’য়েন্ডেল ফিল ফোডেনকে ফেলে দিলেও পে’নাল্টির বাঁশি বাজাননি রেফারি।
প্রতি আক্রমণে উঠেছিল ব্রাজিল। কিন্তু রাফিনিয়া বল হারালে ফের আক্রমণে ওঠে ইংল্যান্ড। ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে শট নিলেও তা কর্নারের বিনময়ে রক্ষা করেন ব্রুনো। ৩২ মিনিটে গর্ডন ও ওয়াটকিন্সের সমন্বয়ে দারুণ আক্রমণ শানায় ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ওয়াটকিন্সের শট প্রতিহত করেন বেরালদো। ৩৩ মিনিটে ভিনিসিউস-রদ্রিগো-পাকেতা ত্রয়ী বুদ্ধিদীপ্ত গেম প্লের মাধ্যমে আক্রমণে ওঠে। পাকেতা নিখুঁত ফ্লিকে বল দেন রদ্রিগোকে। কিন্তু তিনি ঠিকমতো শট নিতে পারেননি।
৩৫ মিনি’টে গোল প্রায় পেয়েই গি’য়েছিল ব্রাজিল। ডি-ব’ক্সের ভেতর থেকে নেওয়া পাকেতার শট শেষ প’র্যন্ত গো’লপোস্টে লেগে প্র’তিহত হয়। ৪১ মিনিটে ডি-ব’ক্সের বা প্রান্ত থেকে বাঁকানো শট নেন গর্ডন। কিন্তু বেনতো দারুণভাবে সেই শট প্র’তিহত করেন। ৪৩ মিনিটে ম্যা’গুয়েরের ভুলে বল পেয়ে যান রা’ফিনিয়া। তার দূরের পোস্টে নেওয়া শট অল্পের জন্য গোলপোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম আক্রমণ শানায় ইংল্যান্ড। তবে ফোডেনের হেড কর্নারের বিনিময়ে ফেরান বেনতো। কর্নার থেকে ফিরতি আক্রমণে ম্যাগুয়ের হেড নিলেও কাজ হয়নি। পরের মিনিটে ফের আক্রমণ করে ইংল্যান্ড।
এবার গর্ডনের শট ঠেকিয়ে দেন বেনতো। ৫৬ মিনিটে রাফিনিয়ার শট ব্লক ক’রেন বেন চিও”য়েল। হ’তাশা লু’কাতে পারেননি তিনি। ৫৯ মিনিটে বল নিয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ওপরে ওঠেন গর্ডন। এরপর মাইনাস করেন। তবে তা প্রতিহত হয় ব্রাজিলের ডিফেন্সে। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে জোরাল শট নেন স্টোন্স। তবে সেই শট লক্ষ্যে ছিল না। ৬১ মিনিটে বল পেয়ে হঠাৎ শট নিয়েছিলেন বেলিংহ্যাম। তবে তা আকাশের পানে পাড়ি জমায়। ৬২ মিনিটে সং’ঘবদ্ধ আক্রমন চালায় ব্রাজিল। তার এক পর্যায়ে গুইমিরেস বল বাড়ান পাকেতাকে। তার শট অবশ্য লক্ষ্যে থাকেনি। ৬৪ মিনিটে চোট পান বেলিংহ্যাম।
সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো ক্রসে হেড নিতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেরে ওঠেন তিনি। ৭২ মিনিটে রাফিনিয়ার শট ফের প্রতিপক্ষের পয়ে প্রতিহত হয়। পরের মিনিটে ব্রাজিলের তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দারুণ আক্রমণে উঠেছিলেন বদলি খেলোয়াড় জারড বোয়েন। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ফেলে দেন বেরালদো। ৭৪ মিনিটে ইংল্যান্ডের জার্সিতে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তরুণ মিডফিল্ডার কবি মাইনু। ৭৯ মিনিটে ডেড লোক ভাঙে ব্রাজিল। মাঝমাঠ থেকে ইংল্যান্ডের ভুলে বল পায় ব্রাজিল। অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙে বল ধরেন ভিনিসিউস। ডি-বক্সের ভেতরে তার শট ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়ের পায়ে বাধা পেয়ে মাত্রই মিনিটখানেক আগে বদলি নামা এন্দরিকের পায়ে যায়।
আলতো টোকায় বল জালে পাঠান এন্দরিক। ব্রাজিলের জার্সিতে তৃতীয় ম্যাচেই গোলের দেখা পেলেন এই বিস্ময়বালক। গোল খেয়ে মরিয়া হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে ব্রাজিলের রক্ষণদূর্গে। কিন্তু কিছুতেই গোলের দেখা পায়নি তারা। বরং শেষ মুহূর্তে দ্রুত প্রতিআক্রমণে ওঠে। স্যাভিও বল নিয়ে উঠে ডানে পাস বাড়ান। এরপর ফিরতি পাস পান এন্দরিক। কিন্তু গো’লরক্ষ’কের গায়ে বল মেরে সু’যোগ নষ্ট করেন তিনি। এ’রপরই শেষ বাঁশি বা’জান রে’ফারি। টানা তিন ম্যাচ জ’য়শূন্য থাকার পর জ’য়ের দেখা পেল ব্রাজিল।