
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে কিনা যা জানাল ভারত।ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরেও, তাঁকে আশ্রয় দেওয়া ভারত সরকারের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ভারতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে যে এই রায়ের কারণে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির পূর্বের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকছে এবং তাঁকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই।
ভারতের অপরিবর্তিত মৌলিক অবস্থান
৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছানোর পর, দেশটির প্রাথমিক অবস্থান ছিল যে এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে তাঁর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘সাময়িক’ (For the time being) আশ্রয়। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পরেও ভারতের এই মূল নীতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা নয়: তাঁকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বা আপাতত রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে, এমন কোনো সম্ভাবনা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না।
প্রত্যর্পণের অনুরোধ ও দিল্লির কৌশল:
গত বছরের ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠিয়েছিল।
দীর্ঘ নীরবতা: সেই কূটনৈতিক পত্র পাওয়ার প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
চাপ বৃদ্ধি: শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আদালতে গণহত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায়, ‘অন্য দেশের দণ্ডিত অপরাধীকে কেন ভারত আশ্রয় দিচ্ছে’—এই বিষয়ে ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক এবং কূটনৈতিক চাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভারত কোনো ব্যাখ্যা দিলেও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ উপেক্ষা করে যাবে।
প্রত্যর্পণ চুক্তির সুযোগ ও ফাঁকফোকর:
২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তিতে এমন কিছু ধারা রয়েছে যা দিল্লিকে বাংলাদেশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার আইনি সুযোগ দিতে পারে:
১. ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ অভিযোগ: চুক্তিতে বলা হয়েছে, অনুরোধকৃত অপরাধের অভিযোগ যদি রাজনৈতিক প্রকৃতির হয়, তবে সেই অনুরোধ খারিজ করা যেতে পারে। যদিও হত্যা, গণহত্যা বা গুমের মতো গুরুতর অভিযোগকে রাজনৈতিক বলে খারিজ করা কঠিন।
২. ন্যায্য বিচারের প্রশ্ন: চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা প্রয়োগ করে ভারত প্রত্যর্পণের অনুরোধ খারিজ করতে পারে—যদি তাদের মনে হয় অভিযোগগুলো কেবল ন্যায়বিচারের স্বার্থে বা সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি।
দিল্লির পর্যবেক্ষকদের অভিমত, ভারত এই চুক্তির সুবিধা নিতে পারে। তারা অনায়াসেই বলতে পারে যে তারা মনে করে না শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন। ‘অভিযোগগুলো শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি’—এই ধারাটি ব্যবহার করেই প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করা যেতে পারে।অর্থাৎ, ভারত এই আইনি সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে প্রত্যর্পণের অনুরোধ হয় বিলম্বিত করবে অথবা পুরোপুরি খারিজ করার পথ বেছে নিতে পারে।



