ভক্তদের খেলোয়াড়দের নিয়ে আগ্রহের কমতি থাকে না। তাদের ক্যারিয়ার,ব্যক্তি জীবন এমনকি পারিশ্রমিকের বিষয়েও আগ্রহ থাকে সবার। কিন্তু খেলা পরিচালনাকারী আম্পায়ারদের
নিয়ে ক’জনেরই বা কৌতূহল থাকে! কখনো কখনো মাঠের আম্পায়াররাও আসেন নানা আলোচনায়। আজকে আমরা আলোচনা করব সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া এমনই পাঁচ আম্পায়ারকে নিয়ে।
১. আলিম দার:
আলিম দার পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। আলিম দার আইসিসির বেশ উচ্চমানের একজন আম্পায়ার। তিনি আম্পায়ারিংয়ে সাধারণত খুব কমই ভুল সিদ্ধান্ত দেন। তবে অনেকের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
তিনি কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ার বলেও অনেকে বলে থাকেন। তবে আলিম দার আম্পায়ারের ভূমিকায় যোগদানের পর মাত্র ছয় মাসের মাথায় আইসিসির এলিট প্যানেলে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ে ২০০০ সালে অভিষেক হয় আলিম দারের। ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আলিম দার ১২৮টি টেস্ট ম্যাচ, ২০৬টি ওয়ানডে ম্যাচ এবং ৪৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
পারিশ্রমিক পাওয়ার দিক থেকেও তিনি প্রথম সারিতে। আলিম দার প্রতিটি টেস্ট ম্যাচের জন্য ৩,০০০ ডলার, ওয়ানডে ম্যাচের জন্য ২,২০০ ডলার এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ১,০০০ ডলার করে পান। সবমিলিয়ে তিনি প্রতি বছর ৪৫,০০০ ডলার উপার্জন করেন। বাংলাদেশি টাকায় যা ৩৬ লাখ টাকা।
২. বিলি বাউডেন:
একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বিলি বাউডেন। তবে এগুতে পারেননি বেশিদূর। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হবার আগেই যে তিনি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হন। আর এতেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয় তাকে।
তবে তিনি দমে যাননি। ক্রিকেটার হিসেবে স্বপ্ন পূরণ না হলেও ক্রিকেট খেলার আম্পায়ার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। বিলি বাউডেনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারের
অভিষেক হয় ১৯৯৫ সালে এবং অবসর গ্রহণ করেন ২০১৬ সালে। ২১ বছরের আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে বিলি বাউডেন ৮৪টি টেস্ট ম্যাচ, ২০০টি ওয়ানডে ম্যাচ এবং ২৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন।
আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হবার কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবেই হাতের তর্জনী আঙ্গুলটি সোজা করতে পারতেন না। তাই আউট বা ওভার বাউন্ডারির সংকেত দেবার সময় তিনি তার তর্জনী আঙ্গুলটি বাঁকা করে সংকেত দিতেন। আর এই স্টাইলটি ক্রিকেট বিশ্বে তাকে আলাদা জনপ্রিয়তা দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের এই আম্পায়ারকে।
এবার আসা যাক পারিশ্রমিকের কথায়। আম্পায়ার হিসেবে কিছুটা ব্যতিক্রমী বিলি বাউডেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রতিটি টেস্ট ম্যাচের জন্য ৩,০০০ ডলার, ওয়ানডে ম্যাচের জন্য ২,২০০ ডলার এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ১,০০০ ডলার করে পেতেন। সবমিলিয়ে তিনি প্রতি বছর তিনিও ৪৫,০০০ ডলার অর্থ উপার্জন করতেন।
৩. নাইজেল লং:
ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একজন অলরাউন্ডার ছিলেন। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষ করে তিনি ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আম্পায়ার প্যানেলে যোগ দেন।
২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের থার্ড আম্পায়ার হিসেবে এবং ২০০৫ সালে নাইজেল তার ব্যক্তিগত এবং ইংল্যান্ডের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের তালিকাভুক্ত আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নাইজেল লং ৬২টি টেস্ট ম্যাচ, ১৩০টি ওয়ানডে ম্যাচ এবং ৩২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিশ্রমিক পাওয়ার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে নাইজেল লং।
প্রতিটি টেস্ট ম্যাচের জন্য তিনি পান ৩,০০০ ডলার। এছাড়া ওয়ানডে ম্যাচের জন্য ২,২০০ ডলার এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ১,০০০ ডলার করে পান। সবমিলিয়ে তিনিও প্রতি বছর বেতন পেতেন ৪৫,০০০ ডলার অর্থ উপার্জন করেন।
৪. পল রেফেল:
ভিক্টোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করা পল রেফেল ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর অসাধারণ পারফরম্যান্সে ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে ডাক পান। অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের হয়ে পল রেফেল মোট ১২৮টি ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে ১,৪৫৮ রান এবং বল হাতে ২১০টি উইকেট সংগ্রহ করেন।
ক্রিকেটার হিসেবে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি আম্পায়ারিং পেশায় নিযুক্ত হন। আইসিসির এলিট প্যানেলেও জায়গা পান রেফেল। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি বেশ ভদ্র একজন ক্রিকেটার ও আম্পায়ার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩টি টেস্ট ম্যাচ, ৬৮টি ওয়ানডে ম্যাচ এবং ১৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন পল রেফেল। পল রেফেল প্রতিটি টেস্ট ম্যাচের জন্য ৩,০০০ ডলার, ওয়ানডে ম্যাচের জন্য ২,২০০ ডলার এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ১,০০০ ডলার করে পান। সবমিলিয়ে বছরে তার আয়ও ৪৫,০০০ ডলার।
৫. ব্রুস অক্সেনফোর্ড:
ব্রুস অক্সেনফোর্ড অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণির একজন ক্রিকেটার ছিলেন। ক্রিকেটার হিসেবে তার ক্যারিয়ার তেমন সমৃদ্ধ না হলেও, আম্পায়ার হিসেবে তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি আম্পায়ারদের প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামের প্রচারক হিসেবেও বেশ পরিচিত।
আম্পায়ার হিসেবে ব্রুস অক্সেনফোর্ডের অভিষেক হয় ২০০৬ সালে। আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫৮টি টেস্ট ম্যাচ, ৯৬টি ওয়ানডে ম্যাচ এবং ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন ব্রুস অক্সেনফোর্ড। প্রতি বছর তার
আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৫,০০০ ডলার। বাংলা টাকায় যা ২৮ লাখ টাকা। এদিকে আইসিসি-র এলিট প্যানেলে যারা আছেন তারা প্রতিটি টেস্ট ম্যাচের জন্য পান ৩,০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী টাকায় আড়াই লক্ষ টাকা থেকে কিছুটা বেশি) করে পেয়ে থাকেন। ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচের
জন্য তাদের বরাদ্দ যথাক্রমে ২২০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ টাকা) ও ১০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ টাকা)। একজন এলিট প্যানেলের আম্পায়ার বছরে আট থেকে দশটি টেস্ট ম্যাচে
দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ানডের সংখ্যায় ১০-১৫টি। বার্ষিক ফি ছাড়াও আইসিসির আরো সুযোগ সুবিধাভোগ করেন তারা। বার্ষিক বোনাসও রয়েছে তাদের জন্য। আইসিসি ইভেন্টে আম্পায়ারিং করলে টাকার পরিমাণটা বাড়ে। বিশ্বের
যে প্রান্তেই ম্যাচে থাকুক, তাদের বিমানে যাতায়াত, পাঁচতারা হোটেলে থাকা-খাওয়ার বিষয়গুলো আইসিসি দেখে। সেক্ষেত্রে তাদের একটি টাকাও খরচ করতে হয় না।