আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের এক বৈঠক শেষে
এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে গত ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর বেশিরভাগই ইভিএম ব্যবহারের
বিরুদ্ধে মতামত দেয়। তবে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি সমমনা দল। ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে ৩০০ আসনেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করার দাবি জানানো হয়। নির্বাচন
কমিশনের সংলাপ সূত্রে জানা যায়, অংশ নেওয়া ২৬টি দলের মধ্যে ১৯টি ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের কেউ কেউ ইভিএমের বিপক্ষে, কেউ কেউ আবার আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা
করে ব্যবহারের পক্ষে ছিল। কেউবা আবার শুধুমাত্র স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইভিএম চায় না বলে সংলাপে জানায়। তবে নির্বাচন
কমিশনারদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ মনে করছেন ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে একটা তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে। ভোটের হার, আইন-শৃঙ্খলা, ব্যয়,
সহিংসতা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে যে ইভিএম, নাকি ব্যালট পেপারের ভোটগ্রহণই অপেক্ষাকৃত ভাল। আর এই তুলনামূলক চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিতে
সুবিধা হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে নির্বাচন কমিশন ১৬টি দল থেকে ইভিএম ব্যবহার না করার প্রস্তাব পেয়েছে। কেউ কেউ অর্ধেক আসনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য বলেছে। বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএম চেয়েছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ইসির হাতে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ইভিএম চুরি হয়েছে। নষ্টও হয়েছে বেশ কিছু মেশিন। তাই দেড় লাখ ইভিএমও ব্যবহার করার মতো নেই সংস্থাটির
হাতে। চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে তড়িঘড়ি করে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৮০ হাজার মেশিন ও পরে ৭০ হাজার মেশিন সংগ্রহ করে কেএম নূরুল হুদার
কমিশন। এরপর বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করা হলে দীর্ঘদিন ভোটকেন্দ্রেই রাখা হয়। কিছু মেশিন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ও বিভিন্ন গোডাউনে রাখা হয়। ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক
সৈয়দ রাকিবুল হাসান এ বিষয়ে বলেছেন, ইভিএম যা আছে তাতে ৭০-৮০টি আসনে হয়তো নির্বাচন করতে পারব। আরও ইভিএম কেনা হবে কি-না, সেটা কমিশনের সিদ্ধান্ত। কমিশন
সিদ্ধান্ত দিলেই বলা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ১৫০ আসনে ইভিএম হলেই ভাল হবে। কমিশনের কাছেও আমার এই প্রস্তাব থাকবে। তবে সিদ্ধান্তটি
আসবে কমিশন বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতেই। ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে আমাদের সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় লোকবল ও অর্থের যোগান আছে কিনা, সেটি দেখতে হবে। এছাড়া যে আলোচনা আছে এতে অর্ধেক আসনে
ইভিএমে ভোট হলে তুলনামূলক একটা চিত্র (ভাল-মন্দ) বেরিয়ে আসবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল ইভিএম ব্যবহারের
একেবারেই বিপক্ষে। তবে প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, এই যন্ত্রটি নির্ভরযোগ্য মেশিন। এর মাধ্যমে দলগুলোর নির্বাচনে যাওয়া উচিত। শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল
এই প্রসঙ্গে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোর উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ইভিএম যাচাইয়ের পর বলেছেন, এটি পারফেক্ট ও নির্ভরযোগ্য মেশিন। ভোট কারচুপি করার এখানে কোনো
সুযোগ নেই। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, আপনারা যদি নতুন কমিশন তৈরি করতে পারেন, তখনো এই ইভিএম মেশিনটা ব্যবহার কইরেন। আপনাদেরই লাভ হবে।