বাংলাদেশের ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। সেই তিনিই ব্যাপক ট্রলের শিকার হয়ে গতকাল রবিবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। বড় তারকারা অবসর নেওয়ার পর সাধারণত ভক্তমহলে শোকের আবহ তৈরি হয়।
কিন্তু মুশফিকের ক্ষেত্রে ঘটছে উল্টো ঘটনা। অনেকে বলছেন, ‘মুশফিক যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বাঁচালেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়ে। ’
আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড টেস্ট বা ওয়ানডের মতো উজ্জ্বল না। তাই তিনি অবসর নেওয়ায় দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের বেশির ভাগই খুশি। কেউ কেউ আবার ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। মুশফিকুর রহিমের
স্ত্রীকে জড়িয়েও মন্তব্য করা হয়েছে। যেটা একেবারেই অনুচিত। অনেকে মুশফিকুর রহিমের অনুশীলনের ভিডিও নিয়ে টিটকিরি করেছেন মন্তব্যে। অনেকে লিখেছেন, ‘তিন ফরম্যাটেই অবসর নেওয়া উচিত ছিল। ’
ক্রীড়া অনুরাগী রায়হানুল ইসলামের মতে, মুশফিকের সাথে সবাই এমন আচরণ করছেন যেন তিনি কোনো অপরাধ করেছেন। আসলে কিন্তু তা না। মুশফিক স্রেফ বিশ্বের মানদণ্ডে তেমন ভালো খেলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘তার পরিসংখ্যান নিয়ে
কাটাছেঁড়া সেটাও ঠিক আছে, কিন্তু ব্যক্তি মুশফিককে এখন আক্রমণ করা হচ্ছে। যেটা কারো ক্ষেত্রেই কাম্য নয়। ’ সমর্থকদের কেউ কেউ মুশফিককে এভাবে আক্রমণের শিকার হওয়ার কারণ হিসেবে বলছেন মুশফিকের কিছুদিনের ব্যবহার।
যখনই সমালোচনা আসে মুশফিক এমন কোনো কথা বলেছেন যেটা সমর্থকদের ক্ষুব্ধ করেছে। যেমন শ্রীলঙ্কার সাথে শতক হাঁকিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনে সমালোচকদের একহাত নিয়েছিলেন। তখন তার স্ত্রীও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে লিখেছিলেন,
‘আপনাদের কাছে কি রিপ্লেসমেন্ট আছে?’ মুশফিকুর রহিম ফেসবুকে এও লিখেছেন, ‘যখন আপনারা ঘুমিয়ে থাকেন তখন আমি অনুশীলন করি। ’ এটা অনেক সমর্থককেই ক্ষুব্ধ করেছে। অনেকে এসব নিয়ে মজা নিয়েছে।
মুশফিকুর রহিম ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচে সহজ রান আউট মিস করেছিলেন, এরপর চলমান এশিয়া কাপে উইকেটের পেছনে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচ ছেড়েছেন। এসব ম্যাচে সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ
বাংলাদেশকে হারিয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের সমর্থকদের অনেকেই মুশফিকের উইকেটকিপিং নিয়ে খুশি না। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় মুশফিক সমালোচকদের আয়নায় মুখ দেখতে বলেছিলেন।
কিছু সমর্থক মনে করছেন, ‘মুশফিকের ধর্মীয় আচার-আচরণের বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট। তিনি বাঘের লোগো ঢেকে রাখেন, এসব বাড়াবাড়ি অনেকের পছন্দ হয়নি। ’ তবে অনেকেই আবার মনে করেন, ধর্ম সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। কেউ যদি নিজের ধর্ম
পালন করে সেটাতে দোষের কিছু নেই। বায়ার্ন মিউনিখের সাদিও মানেও সম্প্রতি ক্লাবের সাথে পানীয় বিয়ারের কম্পানির ফটোশুটে গিয়েও বিয়ারের গ্লাস হাতে নেননি। এর আগে দেখা গেছে ইংল্যান্ডের মইন আলী, আদিল রশিদরা শ্যাম্পেইন দিয়ে উৎসব এড়িয়ে যান।
মাঠে খেলা চলাকালীন মুশফিকের আচরণও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক সময়ই মাঠে এমন আচরণ করেছেন, যা সমর্থকদের মনে দাগ কেটেছে। যেমন ২০২০ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি লিগে সতীর্থ নাসুম আহমেদ ক্যাচ ধরতে এগিয়ে আসায় তাকে মারতে
উদ্যত হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। এ ঘটনা নিয়ে তখন তুমুল আলোচনা হয়েছিল। তবে এসব কারণে মুশফিক, এমনকি তার পরিবারকে আক্রমণ করা ঠিক নয় বলে মত সচেতন ব্যক্তিদের। তার পরও ট্রল চলছে অবিরাম।
– বিবিসি বাংলা অবলম্বনে