বেশ কিছুদিন ধরেই চেনা ফর্মে নেই মুস্তাফিজুর রহমান। মাঠের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স একদমই ছন্নছাড়া। নিজেকে যেন হারিয়ে খুঁজছেন ২৬ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসার। একসময় নিজের মায়াবী কাটারে
ব্যাটারদের প্রতিনিয়তই নাকানিচোবানি খাওয়াতেন মুস্তাফিজ। তবে বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। আগুনে রুপের সেই মুস্তাফিজের দেখা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না মাঠে। বিশেষ করে দেশের বাইরের স্পোর্টিং অথবা ফ্ল্যাট
উইকেটে একদমই গড়পড়তা মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স। এলোমেলো লাইন-লেন্থের বোলিংয়ের কারণে প্রচুর রান খরচ করছেন তিনি, যার ফলে ভুগতে হচ্ছে দলকেও। সদ্য সমাপ্ত
এশিয়া কাপের কথাই ধরা যাক। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ হেরেছে টাইগাররা। জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে আফগানদের যখন দরকার ছিল ৪৩ রান,
ঠিক তখনই বোলিংয়ে আসেন মুস্তাফিজ। ১৭তম ওভারে তার করা ওভার থেকে ১৭ রান নেয় আফগানরা। পরবর্তীতে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ওভারে ২২ রান তুলে নিয়ে নিজেদের জয়ের পথ সুগম করে শেষপর্যন্ত জয়টাও তুলে নেয় আফগানিস্তান। পুরো
ম্যাচে ৩ ওভার বল করে ৩০ রান দিয়ে মুস্তাফিজ ছিলেন উইকেটশুন্য, সেই সাথে ম্যাচের গতিপথ বদলে দেওয়া সেই ১৭তম ওভার- হারের বড় কারণ হিসেবে তাই মুস্তাফিজের বোলিংকে কাঠগড়ায় তোলাই যায়। আরও একটি ম্যাচের কথা
আলাদা করে বলতেই হচ্ছে। গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ। টসে জিতে বোলিং করতে নেমে শুরু থেকেই ক্যারিবিয়ানদেরকে বেশ চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। কমবেশি সবাই কিপটে
বোলিংয়ের পাশপাশি উইকেটও তুলে নিচ্ছিলেন নিয়মিত বিরতিতে। তবে মুস্তাফিজ যেন সাজিয়ে বসেছিলেন খরুচে বোলিংয়ের পসরা। ৪ ওভার বল করে ২ উইকেট তুলে নিলেও রান দিয়েছিলেন ৪৩! বিশেষ করে তার করা ইনিংসের শেষ ওভারে ১৯ রান
তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যা ছিল বেশ হতাশাজনক। ১৪৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শেষপর্যন্ত ১৩৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস, ম্যাচ হারে ৩ রানে। এবার একটু পরিসংখ্যানে
চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। গত কয়েক বছর ধরেই দেশের বাইরে মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। পরিসংখ্যানেও ফুটে উঠছে সেই চিত্র। ২০১৮-২২ এই সময়ের মধ্যে দেশের বাইরে ২৯ ইনিংসে
বোলিং করে তিনি উইকেট নিয়েছেন ৩২টি। এই সময়ে তার বোলিং গড় ৩০ এর চেয়েও বেশি, ৩০.১৮! ইকোনমি রেটটাও কোনোভাবেই ‘মুস্তাফিজসুলভ’ নয়, ৯.৩৯! অন্যদিকে তার ক্যারিয়ার বোলিং গড় ২১.০৬ এবং ইকোনমি রেট ৭.৭৩।
একসময় দেশের বোলিং আক্রমণের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র মুস্তাফিজই দেশের বাইরে গেলে হয়ে যাচ্ছেন ভোতা, পরিসংখ্যানেও সেই ছাপ স্পষ্ট। ২০১৮ সালের বিদেশের মাটিতে মুস্তাফিজের ইকোনমি রেট ছিল ৯.৪৬। ২০১৯ সালে
তা ছিল ৯.৫১, পরের বছর তা গিয়ে দাঁড়ায় ৯.৮৫ এ। ২০২১ এবং ২২ এ তা ছিল যথাক্রমে ৯.৪০ এবং ৯.১২। ক্রমশই বিদেশের মাটিতে রান খরুচে একজন বোলার হয়ে যাচ্ছেন মুস্তাফিজ, যা স্পষ্ট তার ইকোনমি রেটে। বিদেশের মাঠে এরকম বহুবার
দলকে ডুবিয়েছেন মুস্তাফিজ। বোলিং এর ধার কমে যাওয়ার মূল কারণ অবশ্যই বৈচিত্র্যের অভাব। তার বিশেষ ডেলিভারি ‘কাটার’ দেশের ধীর গতির উইকেটে কার্যকর হলেও বিদেশের স্পোর্টিং উইকেটে ততটা
কার্যকর নয়। ব্যাটাররা তাই সহজেই পড়ে ফেলতে পারছেন তাকে। অন্যদিকে বোলিংয়ে কাটার বাদে আর তেমন কোনো বিশেষ অস্ত্র না থাকায় তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন মুস্তাফিজ। তাই একসময় তার বোলিং দুর্বোধ্য থাকলেও সময়ের সাথে সাথে
তা হয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি সহজবোধ্য, যা খরুচে বোলিংয়ের বড় কারণ। অধিনায়করা মুস্তাফিজকে দলের পেস বোলিংয়ের সেরা অস্ত্র বলেই মনে করেন। সে কারণে ভরসাটাও তার ওপরেই বেশি রাখেন সবাই। তবে সেই আস্থার প্রতিদান মুস্তাফিজ কতটা দিতে পারছেন তা গভীরভাবে চিন্তা করার সময়টা হয়ত
এসে গেছে। দলের সেরা বোলার যদি দিনের পর দিন এভাবে হতাশ করে যান তাহলে সেই প্রভাব দলের ওপর বেশ ভালোভাবেই পড়ে। আর মুস্তাফিজের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স দলকে তো ডোবাচ্ছেই সেই সাথে তার নিজের ক্যারিয়ারের জন্যও
ভালো কিছু বয়ে আনছে না। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথটাও তাই মুস্তাফিজকেই খুঁজে বের করতে হবে এবং তাও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই। দেশের লাখো কোটি ক্রিকেট ভক্ত তো আশাভরা চোখ নিয়ে মুস্তাফিজদের দিকেই তাকিয়ে থাকেন!