বাবার সঙ্গে পরিত্যক্ত জমিতে হালচাষ করতেন মারুফা। সেই মারুফার জীবন বদলে গেছে অল্প কয়দিনে। ভারত এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললে ভাগ্যকে আরেকটু সুপ্রসন্ন দাবি করতেই পারতেন মারুফা। এই উঠতি ক্রিকেটারের আদর্শ ভারতের
হার্দিক পান্ডিয়া। যিনি এই মুহূর্তে এশিয়া কাপ খেলতে আমিরাতেই আছেন। সেখানেই নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ট্যুরে যাচ্ছেন মারুফা। কপাল ভালো থাকলে নিজের ক্রিকেটের আদর্শ হার্দিকের সঙ্গেও দেখা হয়ে যেতে পারত মারুফার।
জীবনের গল্পে হার্দিক ও মারুফা একই বাধা, একই কষ্ট, একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে বড় হয়েছেন। কষ্টের পর সফলতা পেয়েছেন। দুঃখের পর পেয়েছেন সুখ। ক্রিকেটীয় মঞ্চেও মারুফা-হার্দিকের মিল রয়েছে।
ভারতের মুম্বাইয়ে বড় হওয়া ক্রুনাল পান্ডিয়া ও হার্দিক পান্ডিয়া দুই ভাই। দুজনই খেলেছেন জাতীয় দলে। ক্রুনাল দলের বাইরে থাকলেও হার্দিক ভারতের নিয়মিত সদস্য।
ক্রিকেটে তাদের উঠে আসার গল্পটা স্রেফ কষ্টের, হাহাকারের। বাবা সরকারি চাকরি করতেন সামান্য বেতনে। মুম্বাইয়ের মতো বিলাসী শহরে যা বেতন পেতেন তা দিয়ে দুই ছেলেকে
পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট একাডেমিতে পাঠানো ছিল স্রেফ বিলাসিতা। পান্ডিয়া ব্রাদার্সের পণ তারা ক্রিকেটার হবেন। তাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার পর ছেড়ে দেন পড়াশোনা।
সারাদিন মাঠে পরে থাকতেন দুজন। একজন বোলিং করতেন। আরেকজন ব্যাটিং। পালাক্রমে দুজনই আবার ব্যাটিং-বোলিং। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইভাইয়ের খাবারের জন্য একটি আইটেম, ম্যাগি নুডলস। ২০ রুপির দুইটি নুডলসই ছিল তাদের ভরসা। সেই থেকে তাদের নাম হয়ে যায় ম্যাগি নুডসল।
হার্দিক পান্ডিয়ার ঘরে সেই ম্যাগি নুডলস থাকলেও বাংলাদেশের মারুফা আক্তারের ঘরে তাও ছিল না। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলে ডাক পাওয়া এ ক্রিকেটার কোভিডের সময় এতোটাই অভাব অনটনে ছিলেন যে তাকে বাবার সঙ্গে হালচাষে নামতে হয়েছিল।
পরিবারের আর্থিক দুর্দশার কারণে বাবার ক্ষেতে কাজ করতে হয়েছে মারুফাকে। গণমাধ্যমে মারুফা খবরের শিরোনাম হলে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নানাভাবে তার পরিবারকে সাহায্য করে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর তাতেই মারুফার মাঠে ফেরার দুয়ার খুলে যায়। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে সেই তিনিই এখন বিশ্বমঞ্চে। কিছুদিন পরই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলবে। ডানহাতি পেসার
মারুফা মেয়েদের সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় ক্রিকেট লিগে দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দেশ ছাড়ার আগে মারুফাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। অধিনায়ক জ্যোতি উচ্ছ্বসিত এই পেস অলরাউন্ডারকে নিয়ে, ‘মারুফা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না ও কি পেয়ে
গেছে। আমরা চাই ও না বুঝুক। জাতীয় দলের চাপ, দেশের হয়ে খেলার চাপ- সেগুলো মাথায় না নিয়ে যদি ও ভালো করে তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের জন্য ভালো কিছু হবে। ও খুব ভালো একজন পেসার। ভালো ব্যাটিংও পারে এবং ফিল্ডিংও দুর্দান্ত, যা আমাদের দলের খুব কাজে আসবে।’
খুব দ্রুত জাতীয় দলে চলে আসলেও মারুফা নিজেকে নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। নিজের বোলিং নিয়ে জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর দিয়েছেন, ‘সুইং আমার ন্যাচারাল।’ পছন্দের ক্রিকেটার নিয়ে জানতে চাইলে অকপটে বলেছেন, ‘হার্দিক পান্ডিয়া।’ কেন উত্তরটা খুব বেশি দিতে পারেননি, ‘আমার মতো এজন্য।’