‘সিনহা সব সময় আশাবাদী মানুষ ছিল। সে আমাদের আশাবাদী হতে শিখিয়েছে। এই রায়ও আমাদের আশাবাদী করেছে। তবে প্রত্যাশা আর সন্তুষ্টি ভিন্ন জিনিস। এই রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ত’খনই সন্তুষ্টি আসবে, যখন বাকি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে রায় কার্যকর হবে।’ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ের পর তাঁর বড় বোন
শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গতকাল সোমবার রাতে কালের কণ্ঠের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি এই মামলার বাদী। আর সিনহার মা নাসিমা আক্তার বললেন, ‘এই রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা বহুলাংশে সন্তুষ্ট। আমাদের আশা এবং বিশ্বাস, উচ্চ আদালতে সময়ক্ষেপণ হবে না, দ্রুত ফাঁসির রায়
কার্যকর হবে।’ সিনহার বড় বোন বলেন, শুদ্ধ আত্মার শক্তি থাকে। মেজর সিনহা বিশুদ্ধ ছিলেন। তিনি দেশপ্রেমিক ছি’লেন। সেই আত্মার শক্তির কারণে রায়ে কেউ বাধা হতে পারেনি। তিনি বলেন, তাঁর ভাই সব সময় আশাবাদী ছিলেন। ভাইয়ের সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাঁরাও ধারণ করেছেন। মামলা দায়েরের পর থেকে
তাঁরা আশাবাদী ছিলেন। এখন আশা করেন, দ্রুত রায় কার্যকর হবে। মা’মলার বাদী বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ পার হয়ে প্রধান দুই অপরাধীর ফাঁসির রায় এসেছে। করোনা মহামারির কারণে কয়েক দফা বিচার কাজ ব্যাহত হয়েছে। আদালত আন্তরিক ছিলেন। দ্রুত শুনানি শেষ
করেছেন। এই রায়ের পর আ’দালতের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে বলে মনে করেন মেজর সিনহার বোন। তিনি বলেন, এটা অপরাধীদের জন্য শিক্ষা। যে যত বড় হোক না কেন, যে পোশাকে থাকুক না কেন, অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে—এ রায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই মামলার
রায় কী হয়, তা নিয়ে সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি ছিল। সাধারণত ব্যক্তি পর্যায়ের কোনো মামলা মানুষ এভাবে মনে রাখে না। সাত আসামির খালাস পা’ওয়ার বিষয়ে মামলার বাদী বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালতের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আমার ভুল হতে পারে, তবু বলছি,
যাঁরা খালাস পেয়েছেন তাঁরা কোনো না কোনোভাবে এই হত্যার সাহায্যকারী ছিলেন। অপরাধীরা যদি ব’লেন, ওপরের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হয়েছি, তা মানা যায় না। কারণ তাঁর বস যদি বলেন অন্যজনের পা ভেঙে দিতে, তাহলে তিনি তা-ই করবেন? তাঁকে তো সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এটা মানবিকও
হতে পারে না।’ সিনহার বোন বলেন, ‘তাঁর ভাইয়ের জীবনীশক্তি ছিল অনেক বেশি। গুলি করার পরও অ’নেকক্ষণ বেঁচে ছিলেন। তাঁকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিলে হয়তো বেঁচেও যেতে পারতেন। এখানে তাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। ’ শারমিন শাহরিয়া আরো বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, কেউ যেন আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। প্রত্যেকেরই
আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। এই রায়ে এটিই প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’ মামলার বাদী আরো বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই প্রদীপ এবং লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছি। আমরা বলিনি, সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। বলেছি, অপরাধ অনুযায়ী সাজা দিতে হবে। এটি হলে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতো। ’ তিনি বলেন, দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অনেক অচেনা মানুষ
তাঁদের ফোন দিয়ে সহানুভূতি জানাচ্ছে। মানুষের ভালোবাসার প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ। ছেলে হত্যার রায় শুনতে সিনহার মা নাসি’মা আক্তারও গতকাল কক্সবাজার যান। রায় ঘোষণার সময় তিনি মেয়েকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।