টস হারলেই ম্যাচ হার! এবারের এশিয়া কাপে এমনটাই ছিল রীতি। অথচ ফাইনালে ভানুকা রাজাপাকসে এসে সব গড়বড় করে দিলো। দেখিয়ে দিলেন, আগে ব্যাট করেও ম্যাচ জেতা যায়। ফাইনালে
অসাধারণ এক ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কাকে চ্যাম্পিয়ন বানানো রাজাপাকসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেট বিশ্ব। অথচ এশিয়া কাপে খেলারই কথা ছিল না এই ৩০ বছর বয়সীর।
এশিয়া কাপের ফাইনালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার শুরুটা ছিল অত্যন্ত বাজে। আগে ব্যাট করাতেই হয়তবা হারার আগেই হারের ভয় ভর করেছিল লঙ্কানদের। পাকিস্তানের পেস আক্রমণে
দিশেহারা লঙ্কানরা তাইতো মাত্র ৫৮ রান তুলতেই হারায় পাঁচ উইকেট। জমজমাট ফাইনাল দেখার আশায় থাকা ভক্তরা তখন হতাশ একপেশে ফাইনালের কথা ভেবে। ঠিক তখনই ক্রিজে ভানুকা রাজাপাকসে আর ওয়ান্নিদু হাসারাঙ্গার
পাল্টা আক্রমণ। হাসারাঙ্গার-রাজাপাকসে জুটিতে এল ৫৮ রান। তাতে জাগতে থাকে ম্যাচে ফেরার আশা। তবে তখনই হারিস রউফের বলে বিদায় নেন ৩৬ রান করা হাসারাঙ্গা। ফের অল্প রানেই গুটিয়ে যাবার
আশঙ্কা জাগে লঙ্কানদের। কিন্তু রাজাপাকসে দমার পাত্র নন। করুনারত্নেকে নিয়ে পাকিস্তানি বোলারদের তুলোধুনো করার পরিকল্পনা করলেন। শেষ ৩১ বলে দুজন মিলে তুললেন ৫৪ রান। যেখানে করুনারত্নের
অবদান ১৪ বলে ১৪। বাকি ১৭ বলে রাজাপক্ষে যোগ করেন ৪০ রান! ভানুকা শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪৫ বলে ৭১ রান করে। ১০০ এর নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় থাকা শ্রীলঙ্কা পেয়ে যায় ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি। এরপর বল হাতে
হাসারাঙ্গার হন্তারক মুর্তিধারণে নিশ্চিত হয় শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠ এশিয়া কাপ শিরোপা। ফাইনালের নায়ক হয়ে সবটুকু আলো টেনে নেওয়া রাজাপাকসের হয়তো তখন মনে পড়ছিল এ বছরের জানুয়ারি মাসের কথা।
বছরের শুরুতেও জানুয়ারির ৫ তারিখে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভানুকা রাজাপাকসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তার এই অবসর সে সময় অবাক করেছিল সকলকে। অবসরের কারণ হিসেবে বলেছিলেন পরিবারকে সময় দিতে চান। তবে নেপথ্যের কারণ ছিল আলাদা।
মূলত বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থেকেই এতো কম বয়সে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। ২০১০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ভানুকা ২০২১ সালে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন ফিটনেসজনিত কারণে।
শ্রীলঙ্কার কোচ মিকি আর্থার খেলোয়াড়দের ফিটনেসের উন্নতির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ঠিক করে দেন ফিটনেসের মানদণ্ড। স্থূল শরীরের ভানুকা সেই মানদণ্ড ও ফিল্ডিংয়ে কোচকে খুশি করতে
না পারায় বাদ পড়েন দল থেকে। সে সময়ে দল থেকে বাদ পড়ায় শ্রীলঙ্কান বোর্ডের দলগঠনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ৫ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা দেন তিনি। এরপরই তিনি দেন এই অবসরের ঘোষণা। অবসরের
সিদ্ধান্ত নিয়ে বোর্ডকে চিঠি দিলে টনক নড়ে দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের। ক্রীড়ামন্ত্রী নমল রাজাপাকসের হস্তক্ষেপে অবসরের চিঠি প্রত্যাহার করে নেন ভানুকা রাজাপাকসে। ভাগ্যিস সেদিন অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছিলেন। নতুবা
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা দেশটি হয়ত শিরোপা উৎসব করতে পারত না আজ। ক্রিকেটবিশ্বও মিস করতো ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে লঙ্কানদের এশিয়া জয়।